হোম > ছাপা সংস্করণ

এত প্রশ্ন সন্দেহ তবু তদন্তে নেই গা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আগুন যেমন এক লহমায় সব শেষ করে দিয়েছিল, তেমনি দ্রুত আবার সব গুছিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়তে চাইছেন রাজধানীর ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ক্ষতি যা হয়েছে তা মেনে নিয়ে ঈদের আগে কিছু ব্যবসা তাঁরা করতে চান। আগুনে পুড়ে যাওয়া আর পানিতে নষ্ট হওয়া জিনিসপত্র সরিয়ে দ্রুত দোকান প্রস্তুত করার জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছেন তাঁরা। 

এদিকে, রাজধানীতে অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক আগুন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তর ও বাহিনীও এসব ঘটনার পেছনে নাশকতার গন্ধ পাচ্ছে, ষড়যন্ত্র দেখছে। বিরোধীরাও বলছে সেই এক কথা। কিন্তু শুধু যেন মুখে বলাই সার। পেছনে যদি কিছু থাকে তাহলে তা খুঁজে বের করতে যেন কারও গা নেই। 

তাই আগুনের ঘটনার পরদিন গতকাল রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুনের ঘটনাকে নাশকতা বলে জনগণের সঙ্গে মশকরা করছে সরকার। যদি নাশকতাই হয়ে থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা খতিয়ে দেখা উচিত।’ 

জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমাদের কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। সরকার জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা না করে নিজেদের রক্ষা করার জন্য বেশি ব্যস্ত।’ 

মামলা নেই শুধু জিডি
গত শনিবার ভোরে নিউ মার্কেটসংলগ্ন ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। ভয়াবহ আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয় ২৭ ঘণ্টা পর গতকাল সকালে। 

কিন্তু গতকাল সারা দিন অবস্থান করে দেখা যায়, ঘটনাস্থলে নেই কোনো বিস্ফোরক প্রতিরোধ ইউনিট, কোনো তদন্তকারী সংস্থা, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কিংবা সিটি করপোরেশনের লোকজন। আগুন নিয়ে যে এত কথা সেই আগুনের তদন্তে যেন কারও কোনো আগ্রহ নেই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় শুধু পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। কোনো মামলা করা হয়নি। 
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘ঘনঘন আগুন লাগার কারণ নিয়ে সবার মাঝেই প্রশ্ন উঠছে। তবে তদন্ত শেষে নিশ্চিত না হয়ে, নাশকতার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।’ 

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান (লিটন)। তিনি বলেন, মার্কেটের ভেতরে আর কোথাও আগুন নেই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের সূত্রপাত দোতলা থেকে, পরে তিনতলায় ছড়ায়। 

ডিএসসিসি ও ফায়ারের তদন্ত কমিটি
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। 

করপোরেশনের অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীনকে আহ্বায়ক এবং প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীনকে সদস্যসচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিন রাতেই পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। তারাও তাদের প্রতিবেদন পাঁচ দিনের মধ্যে দেবে বলে জানিয়েছে। 

ব্যবসায়ীদের তোড়জোড়
বেলা সাড়ে এগারোটার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা পুড়ে যাওয়া মার্কেটটিতে উঠতে শুরু করেন। এরপর যে যার দোকানে চলে যান। সেখানে গিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁদের পুড়ে যাওয়া দোকান পরিষ্কার করতে থাকেন। 

আকরাম হোসেন নামের ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী আজকের পত্রিকাকে জানান, তৃতীয় তলায় তাঁর ৮টি দোকান আছে। মালামাল ছিল প্রায় ২ কোটি টাকার। আগুনে সব পুড়ে গেছে। দোকানগুলোতে মোট ৩২ জন কর্মচারী ছিলেন। সবাই মিলে পরিষ্কার করছেন। আজকের মধ্যে সব পরিষ্কার করে কাল থেকে আবার ব্যবসা শুরু করতে চান। 

মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার পাঁচটি দোকানের মালিক মোস্তফা কামাল। অল্পের জন্য তাঁর সব দোকান রক্ষা পেলেও দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ রয়েছে বেচাকেনা। তিনি বলেন, ‘মার্কেটে আগুন লাগার খবরে আমরা দ্রুত মালামাল সরিয়ে নিতে পেরেছিলাম। এখন পানি ও ময়লা সরিয়ে দ্রুত ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করছি।’ 

দ্রুত মার্কেট খোলার বিষয়ে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে (দ.) বণিক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আবুল খায়ের বলেন, তাঁদের মার্কেটে মোট দোকান ১ হাজার ২৭৫টি। এর মধ্যে ২৪৩টি দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। নিচতলার ৩টি, দ্বিতীয় তলায় ৩০ থেকে ৩৫টি এবং বাকিগুলো তৃতীয় তলায়। আগুন নিভে যাওয়ার পরে তাঁরা এখন দ্রুত পরিষ্কার করতে কাজ করছেন। আশা করছেন, বিকেলের মধ্যেই পরিষ্কারের কাজ শেষ করতে পারবেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুতের লাইন মেরামত করে আগামী দুই দিনের মধ্যে দোকান খুলতে চান ব্যবসায়ীরা। 

আরও পড়ুন:

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ প্রাণহানি

সেকশন