হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
নির্মাণের এক যুগ পার না হতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে শাহ আমানত সেতু। সেতুসংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর তলদেশ ড্রেজিং না করায় সেতুটির কয়েকটি পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেতুটি ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। একই কারণে সেতুটির উত্তরাংশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সহায়তায় মেরিন ফিশারিজ একাডেমি সেতুর তলদেশে ডিজিটাল জরিপ চালায়। ওই জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ডিজিটাল জরিপে উঠে আসে, সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের পাশ থেকে অস্বাভাবিকভাবে মাটি সরে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ৩ থেকে ৫ নম্বর পিলার পর্যন্ত মাঝখানে সেতুর তলদেশে তারা ৭৪ থেকে ৭৮ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পেয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে সেতুর ১ নম্বর পিলার থেকে ৩ নম্বর পর্যন্ত মাঝখানে গভীরতা পেয়েছেন মাত্র ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি। এই অংশে সেতুর তলদেশে তৈরি হয়েছে চর।
তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, সেতুর কোনো পিলার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাহেদ হোসেন জানান, এতে শঙ্কারও কোনো কারণ নেই। সওজের বিশেষজ্ঞরা নিয়মিতই পর্যবেক্ষণে থাকেন। কয়েক দিন আগেও তাঁরা সবকিছু দেখে এসেছেন। সেতুর কোনো পিলার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। সেতুর যে অংশে তাঁরা ৭৮ ফুট গভীরতা পেয়েছেন, সেখানে পিলারের পাইলিং আছে ২৫৫ ফুট। তাই এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যাবে না।
ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম পরিচালনাকারী মেরিন ফিশারিজ একাডেমির জরিপ দলের প্রধান অধ্যাপক নোমান আহমেদ সিদ্দিকি জানান, জরিপে দেখা যায়, সেতুর উত্তরাংশে নদীর স্বাভাবিক গভীরতা থেকে ৪৭৬ মিটার ভরাট হয়ে স্রোতের স্বাভাবিক গতিপথ বদলে গেছে। সেতুর পিলারের মাটিকে ক্রমাগত সরিয়ে নিচ্ছে। যা পিলারের ভিত দুর্বল করে দিচ্ছে। নদী ড্রেজিং করে দ্রুত স্রোতের স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে না আনলে সেতুটি সামনে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, চলতি মাসের শুরুতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ডিজিটাল জরিপ চালানো হয়। এ সময় নদীর তলদেশে ক্যামেরা পাঠিয়ে দেখা যায়, সেতুর কয়েকটি পিলারের নিচ থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাটি সরে গেছে। আবার কয়েকটি পিলারের মাঝখানে চর জেগে স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সেতুর পিলার ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ঈদের পর এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
শাহ আমানত সেতুটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, বান্দরবান জেলায় সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি ২০১০ সালের বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার পালিত বলেন, সেতুর উত্তর অংশের দুটি খাল দিয়ে প্রতিনিয়ত পলি এসে সেতুর উত্তরাংশে অর্ধেকের বেশি ভরাট হয়ে গেছে। যে কারণে দুই নম্বর পিলারের কাছে মাত্র ৭ ফুট গভীরতা পাওয়া গেছে।