নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (চমেক) ব্লাড ব্যাংকের সামনে একটি দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে কিডনি বিক্রির একটি বিজ্ঞপ্তি। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য ‘এ পজিটিভ’ একটি কিডনি বিক্রি করার আগ্রহ প্রকাশ করা হয় এতে। তবে ওই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। আসলেই কেউ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কিডনি বিক্রি করতে চান, নাকি দালাল চক্র এতে জড়িত এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত শনিবার সন্ধ্যায় এমন বিজ্ঞপ্তিটি চোখে পড়ে অজ্ঞাতনামা রোগীদের সহায়তা করা মো. সাইফুল ইসলাম নেসারের। কৌতূহলবশত বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে তিনি সঙ্গে সঙ্গে কল দেন। তবে কেউ কল রিসিভ করেননি। গতকাল রোববার দুপুরে এই প্রতিবেদকও কল দেন ওই নম্বরে। তবে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, ‘আসলে অসহায় কোনো ব্যক্তি কি-না, সেটি জানতে কল দিয়েছিলাম। অসহায় হলে সাহায্য করার ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্তু নম্বরটিতে কল দেওয়ার পর ফোন রিসিভ না হলে, মনের মধ্যে খটকা লাগে।’
চমেকে প্রায়ই এমন নানা বিজ্ঞপ্তির চোখে পড়ে। প্রধান ফটকের সামনে, কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের আশপাশে দেখা যায় এমন বিজ্ঞপ্তি। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, কোনো দালাল চক্র এতে জড়িত।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র কিডনি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। রাতের সকলের অগোচরে এসে বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দ্রুত সটকে পড়েন চক্রটির সদস্যরা। কখনো তাঁরা অবস্থান নেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। প্রবাসে সুবিধা করতে না পেরে দেশে ফিরে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে চক্রটি। প্রবাসফেরত ওই সব ব্যক্তিদের অনেকেই ঋণের টাকা শোধের জন্য ৫-৬ লাখ টাকায় কিডনি বিক্রি করে দেন চক্রটির কাছে।
ওই চক্রের সদস্যরা চমেকসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকেন বলে ধারণা চমেকের সদ্য বিদায়ী উপপরিচালক মো. আফতাব উল ইসলামের। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চমেকে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র এমন কিডনি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি সেঁটে যায়। আমরা বহুবার এগুলো তুলে ফেলেছি। মানুষের উচিত এসব চক্রের ফাঁদে না পা দেওয়া।’
গত ৩১ ডিসেম্বর এমন একটি চক্রের সন্ধানও পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৭। চট্টগ্রাম থেকে মানুষের কিডনি ও লিভার পাচারকারী একটি আন্তর্জাতিক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করে সংস্থাটি। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ আলী ডালিম, আতিকুর রহমান রনি ও মো. আলম হোসেন।