আমজাদ ইউনুস
পবিত্র কোরআনের ১০১তম সুরা—সুরা কারিআ। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। আরবি কারিআ শব্দের অর্থ মহাবিপদ। এই অর্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভয়াবহ দুৰ্ঘটনা ও বড় রকমের মারাত্মক বিপদকে কারিআ বলা হয়। (আল-মুজামুল ওয়াসিত) পবিত্র কোরআনে কারিআ শব্দটি কিয়ামত বা মহাপ্রলয় বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। একইভাবে আল-হাক্কাহ, আত-ত্বাম্মাহ, আস-সাখখাহ, আল-গাশিয়াহ ইত্যাদি শব্দও পবিত্র কোরআনে কিয়ামত অর্থে এসেছে।
কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া এবং পরকালে ফের জীবিত হয়ে আল্লাহর দরবারে পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের হিসাব দেওয়া এ সুরার আলোচ্য বিষয়। আল্লাহ তাআলা এ সুরায় কিয়ামতের দিনের ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি হাশরের ময়দানে প্রতিদান গ্রহণের জন্য মানুষের উপস্থিত হওয়ার কথাও এসেছে।
সুরা কারিআর বয়ান অনুসারে, সেদিন মানুষ উদ্ভ্রান্তের মতো থাকবে। তাদের বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো মনে হবে। দিশেহারা ও পাগলপারা হয়ে ছুটোছুটি ও দৌড়াদৌড়ি করবে। আগুন জ্বালানোর পর পতঙ্গ যেমন হন্যে হয়ে আগুনের দিকে ছুটে আসে, সেদিন মানুষ তেমনিভাবে হাশরের মাঠের দিকে ছুটে আসবে। (ইবন কাসির, কুরতুবি)
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, সেদিন পর্বতমালা ধুনিত রঙিন পশমের মতো হবে। হালকা বাতাসে উড়তে থাকবে। ধুনিত পশম যেমন খণ্ডবিখণ্ড হয়ে চতুর্দিকে উড়তে থাকে, তেমনি শিঙায় ফুঁক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়গুলো খণ্ডবিখণ্ড হয়ে উড়তে থাকবে।
পরকালের জবাবদিহি সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেদিন যার পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে, সে জান্নাতে যাবে। সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে। চিরস্থায়ী জান্নাতই হবে তার নিরাপদ ঠিকানা। আর যার আমলের পাল্লা হালকা হবে, সে হাবিয়ায় যাবে। হাবিয়া হলো প্রজ্বলিত আগুন বা জাহান্নামের নিম্ন স্তর। যার আমলের পাল্লা হালকা হবে, হাবিয়া হবে তার আশ্রয়স্থল।
লেখক: শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক