সম্পাদকীয়
আকর্ষণীয় ও বিস্তারিত বর্ণনার একজন ওস্তাদ মাখসেল প্রস্ত, আমি কিছুক্ষণের জন্য ফিরে যাচ্ছি ‘স্যাঁৎ ব্যোভের বিরুদ্ধে’ বইয়ে। প্রস্ত লিখছেন, ‘বস্তুত জনসমক্ষে যা প্রকাশিত হয় তা হলো কারও গভীরতর সত্তার নিঃসরণ, একাকী ও কেবল নিজের জন্য তা লিপিবদ্ধ হয়। অন্যদিকে নিজেকে মানুষ যা দেয়, তা কথাবার্তায় হোক আর সেই সব বৈঠকি রচনা, যা একধরনের ছাপার অক্ষরের কথোপকথনই হোক, তা তাঁর আরেক উন্মূল সত্তার সৃষ্টি। পৃথিবী ও তাতে নিয়ত পরিদৃশ্যমান সত্তাকে একপাশে সরিয়ে রেখেই যে আন্তর সত্তার উদ্ঘাটন সম্ভব, তার নয়।’
এ কথাগুলো যখন লিখছেন, তখনো কিন্তু তিনি সেই বিষয়কে খুঁজে পাননি, যা তাঁকে নিয়ে যাবে মহান ‘সৃষ্টি শ্রমের উল্লাসে’। এই উদ্ধৃতিগুলো থেকে স্পষ্ট যে তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি বিশ্বাস করতেন স্বজ্ঞায় এবং অপেক্ষা করতেন সৌভাগ্যের জন্য। এগুলো আমি অন্যত্রও উদ্ধৃত করেছি। এর কারণ হলো, আমি কীভাবে নিজের কাজে নিবিষ্ট হই তার একটি চিত্র পাওয়া যাবে এখান থেকে। আমি বিশ্বাস করি স্বজ্ঞায়। গোড়া থেকেই এর শরণ নিয়েছি এবং এখনো তা-ই করছি। ভাবনার বিকাশ ঠিক কোন পথে ঘটবে, লেখায় এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা থাকে না। বিষয় খোঁজার ভার দিয়ে রেখেছি স্বজ্ঞাকে, আমি লিখিও স্বতঃস্ফূর্ত বোধের দ্বারা তাড়িত হয়ে। শুরুতে একটা ধারণা, একটা কাঠামো হয়তো থাকে, কিন্তু যা লিখেছি তা পুরোপুরি অনুধাবন করতে লেগে যায় আরও কয়েকটা বছর। ইতিমধ্যে বলেছি, নিজের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সব কথাই আছে আমার বইগুলোয়। এবার কিছুটা আগ বাড়িয়ে বলব, এই আমি হচ্ছি আমার বইগুলোরই সমষ্টি। প্রতিটি বই-ই স্বজ্ঞাজাত এবং সৃষ্টিশীলতার গভীর বোধের দ্বারা নির্মিত। প্রতিটি এর আগেরটির ওপর দণ্ডায়মান এবং সেটা থেকেই উৎসারিত। সাহিত্যজীবনের যেকোনো ধাপেই এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে যে সর্বশেষ বইটি ধারণ করে আছে এর পূর্ববর্তী সব কটির নির্যাস।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদিয়ান-ব্রিটিশ লেখক ভি এস নাইপল ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।