টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পুরুষশূন্য গ্রাম। প্রসববেদনায় কাতর গৃহবধূকে হাসপাতালে পৌঁছে দিল পুলিশ। এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন লুবনা খাতুন নামের ওই নারী। তিনি উপজেলার গজালিয়া গ্রামের ইউসুফ হোসেনের স্ত্রী।
জানা যায়, গত রোববার উপজেলার বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে সোমবার রাতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী খায়রুল আমিন ও মনির শিকদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গ্রেপ্তার-আতঙ্কে গজালিয়া গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।
এই অবস্থার মধ্যে রাত দুইটায় ওই গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা লুবনা খাতুন প্রসববেদনায় কাতর হয়ে পড়েন। ওই পরিস্থিতিতে এলাকায় পরিচিত কোনো ইজিবাইক ও ভ্যানচালককে পাওয়া যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় একটি গাড়ির অপেক্ষায় ওই নারীসহ স্বজনেরা প্রায় দেড় ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন টুঙ্গিপাড়া থানা-পুলিশদের একটি দল টহল দিচ্ছিল।
গভীর রাতে রাস্তায় নারীসহ কয়েকজনকে দেখে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন উপপরিদর্শক কামরুল ইসলাম। ঘটনা শুনে তিনি পুলিশের গাড়িতে করে ওই নারীকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। গর্ভবতী নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
পরে পুলিশের গাড়িতেই গর্ভবতী ওই নারীকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার সকালে লুবনা খাতুন একটি কন্যা জন্ম দেন।
ওই নারীর স্বামী ইউসুফ হোসেন বলেন, পুলিশের এই মহতী উদ্যোগের কারণে দুটি প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। তিনি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক বলেন, মঙ্গলবার সকালে ওই প্রসূতি হাসপাতালে ভর্তি হন। কন্যাসন্তান প্রসব করার পরে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ।
টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, ওই নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথম টুঙ্গিপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা, পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোপালগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তখন তাঁদের গাড়িতেই গোপালগঞ্জ হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। মূলত মানবিক কারণে ও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাঁরা এই কাজ করেছেন।
নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর শুনেই তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। পরে দুই পক্ষ পালিয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ করেনি।