বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার তালপট্টি-মেগচামী সড়কের সংস্কারকাজ ধীরগতিতে হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, সড়কে ধুলাবালি ও ছোটবড় খানাখন্দের কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল একপ্রকার দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সড়কের দুই ধারের বাড়িঘর, গাছপালায় পড়েছে ধুলার আস্তরণ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করে দুর্ভোগ কমানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কটিতে খোয়া, বালি ফেলে সমান করা হয়েছে। এ অবস্থাতেই সড়কটি দিয়ে ডাম্প ট্রাক, ইটভাটার ট্রলি, অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। কিছু কিছু জায়গা থেকে খোয়া সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাতাসে সড়কের বালু উড়ে কুয়াশায় রূপ নিয়েছে। ধুলা পড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে সড়কের পাশের বাড়িঘরসহ গাছপালা।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আরসিআইপি প্রকল্পের অধীনে বালিয়াকান্দির তালপট্টি থেকে বালিয়াকান্দি ভায়া মধুখালী সড়কের মেগচামী পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫৩৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। ৬ কোটি ৫১ লাখ ৬১ হাজার ২৬৮ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি করছেন মীর হাবিবুল আলম নামের এক ব্যক্তির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সড়কের পাশের বাসিন্দা মহিদুল, মিরাজ, রাশেদুলসহ আরও অনেকেই জানান, শুরু থেকেই সংস্কারকাজ খুব ধীরগতিতে চলছে। প্রথমে খনন করে অনেক দিন ফেলে রাখা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে খোয়া, বালু ফেলে সমান করা হয়েছে। ছোট বড় গাড়ি চলাচলের সময় প্রচণ্ড ধুলাবালির সৃষ্টি হয়। ধুলোয় মানুষের শরীর ভরে যায়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বেশি। ধুলা চোখে, মুখে, নাকে ঢুকে অনেকেই শ্বাসকষ্টজনিত ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার সরকার বলেন, ‘সড়কের ধুলাবালি সব বয়সের মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। এ ধরনের পরিবেশে দীর্ঘদিন থাকলে শ্বাসকষ্টজনিত, চর্মসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধুলোবালিতে সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় শিশু ও বৃদ্ধরা।’
সংস্কারকাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাইট ম্যানেজার আল আমিন বলেন, ‘আমরা আরও কয়েকটি প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছি। সেগুলোর কাজও চলছে। গত বছরের ১ নভেম্বর সতালপট্টি-মেগচামী সড়কে বালু ও খোয়া ফেলে সমান করার কাজ শেষ হয়েছে। খুব শিগগির কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হবে। ধুলাবালিতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আপনারা কী করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন পানি দিয়ে ধুলাবালি রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই সড়কের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছেন। কাজের যে ধীরগতি রয়েছে, সেটি দুঃখজনক। মানুষের ভোগান্তি দুর করতে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা দরকার।’
উপজেলা প্রকৌশলী আলমগীর বাদশা বলেন, ‘সড়কটির কাজের মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হবে। এখনো কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি যাতে দ্রুতই কাজ শেষ করে সে বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তি লাঘবে সড়কে পানি ছিটানোর জন্য বলা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাসিবুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি বাস্তবায়নকারী দপ্তরগুলোর সঙ্গে কথা বলব, তারা যেন দ্রুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়ে সংস্কারকাজ শেষ করেন।’
রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। কাজটি দ্রুত সমাপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’