সিলেট প্রতিনিধি
টানা তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি। যদিও এখনো পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তারপরও আগে থেকে নদ-নদী পানিতে ভরাট থাকায় চলমান বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে আবার বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, পুরোদমে বর্ষাকাল শুরু হতে আরও কয়েক দিন বাকি আছে। তারপরও এখন থেকেই প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হবে। বর্ষাকাল শুরু পর থেকে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে। কিন্তু প্রাক বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়ে নদ-নদী ভরাট হয়ে পড়েছে। তাই বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি ধারণ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হবে। আগামী ১১ জুন থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
এদিকে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ১০ জুনের পর থেকে ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনটা হলে আগামী ১০ জুন থেকে ১২ জুনের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের কিছু নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ছিল ১২.৪৬ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২.৭৫ সেন্টিমিটার। সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি সন্ধ্যা ছয়টায় ছিল ৯.৮৮ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০.৮০ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় ছিল ১৪.৪২ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫.৪০ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে সন্ধ্যা ছয়টায় ছিল ১২.১৪ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩.০৫ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে সন্ধ্যা ছয়টায় ছিল ৭.৬৮ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া লোভা, সারি ও ধলাই নদীর পানিও বেড়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘আগামী ১০ তারিখ থেকে শুরু হয়ে থেকে ১৪ পর্যন্ত মধ্যে ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সিলেট অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সে সময় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। আমাদের চলমান বৃষ্টির পাশাপাশি মূল চিন্তার কারণ পাহাড়ি ঢল।’
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে সিলেটে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নদ-নদীর বাঁধগুলো মেরামত ও সংস্কারের কাজ করা শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সেই মেরামত কাজ শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশিদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থলের নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের মেরামত সম্পন্ন হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, সিলেটে গত শনিবার সকাল ছয়টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১৪৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২৭.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। প্রসঙ্গত গত ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তলিয়ে যায় নগরের বেশির ভাগ এলাকাসহ ১২টি উপজেলা।