গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
ঈদের ছুটি শেষে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। গত শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সারি গতকাল রোববার সন্ধ্যায় একটুও কমেনি।
দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে থেকে বেশির ভাগ যাত্রী অতিষ্ঠ হয়ে বাস থেকে নেমে দৌলতদিয়া ঘাটের দিকে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা আর গরমে অতিষ্ঠ যাত্রীরা হেঁটে ফেরিতে ধরার চেষ্টা করছেন।
রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট ও আশপাশের সড়কে দেখা যায়, কর্মস্থলে ফেরা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলাগামী মানুষ বাস থেকে নেমে মাহিন্দ্র, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঘাটে গিয়ে ফেরি ও লঞ্চে নদী পার হচ্ছেন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঘাট থেকে খানখানাপুর ছোট ব্রিজ পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে কর্মস্থলে ফেরা মানুষ। ফেরিতে উঠতে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসকে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যানজটে আটকে থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। যে যেভাবে যে সড়ক দিয়ে পারছেন ঘাটে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। আবার দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটেই ঘাটের দিকে যাচ্ছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী দূরপাল্লার পরিবহন এখনো ঘাটে আটকে আছে। যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কাঁচা পণ্যবাহী অনেক গাড়িও আটকে আছে।
বরিশালের উজিরপুর থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় রওনা করেন ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। ১২ ঘণ্টার বেশি সময় মহাসড়কে থেকেও এখনো ঘাট পারি দিতে পারেননি। গতকাল সকালে ফেরিঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায় আটকে থাকা অবস্থায় তাঁকে বাসের ইঞ্জিন কভারে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।
শরিফুল ইসলামের মতো ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী শত শত মানুষের রাত কাটছে গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
বরগুনা থেকে প্রায় ২২ টন তরমুজ বোঝাই করে কাভার্ডভ্যান নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন ফল ব্যবসায়ী আবুল বাশার। তিনি বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে ঘাটে আটকা পড়েন। বিশেষভাবে তাঁদের যাওয়ার কথা বলে ১ হাজার ৮০০ টাকার টিকিট সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়েছে। এরপরও প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে আটকে থাকায় গরমে অনেক তরমুজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে গতকাল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল ছিল। অধিকাংশ মানুষ ঘাটে যানজটে আটকে থাকার ভয়ে ফেরি পারাপারের পরিবর্তে লঞ্চে পার হচ্ছেন। প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ১১ হাজার ৫৯৩টি যানবাহন ফেরিতে নদী পাড়ি দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ডসংখ্যক গাড়ি পার করা হয়েছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ২১টি ফেরি চললেও গত শনিবার দুপুরে দুটি ফেরি বিকল হয়ে পড়ে। পরে সন্ধ্যার আগেই বের হয়ে যায়। বর্তমানে ২১টি ফেরি ও পাঁচটি করে ঘাট সচল থাকলেও জরাজীর্ণ সড়ক ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার পথের সব গাড়ি এই পথ ব্যবহার করায় অতিরিক্ত চাপ পড়েছে।