মিঠাপুকুর প্রতিনিধি
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই লাখ নারীকে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাঁরা এখন বেঁচে আছেন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে। তবে সান্ত্বনা এই যে তাঁদের কেউ কেউ নিজেদের ত্যাগের স্বীকৃতি পেয়েছেন। পরিচয় মিলেছে নারী মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) হিসেবে। তেমনই একজন মোছা. ফাতেমা বেগম।
ফাতেমা মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়নের ফুলচৌকি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী। সম্প্রতি আলাপকালে এই বীরাঙ্গনা জানালেন তাঁর সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা।
ফাতেমা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় একদিন পাকিস্তানি সেনারা ফুলচৌকি গ্রাম ঘিরে ফেলে গুলি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ি থেকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যান এবং এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখেন। তখন তিনি নতুন বউ। শাশুড়ি তাঁকে পাশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে আরও ২৫ থেকে ৩০ জন নারী ছিলেন। তাঁরা ভয়ে চুপচাপ বসে ছিলেন। কিছু সময় পর কয়েকজন সেনা সদস্য ওই ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে ও আরও কয়েকজনকে আলাদা ঘরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়।
নির্যাতনের একপর্যায়ে নারীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে বর্বর সেনা সদস্যরা চলে যান। এ সময় কান্নাকাটি শুনে প্রতিবেশী চৌধুরী বাড়ির লোকজন ফাতেমাসহ কয়েকজনকে রংপুর শহরে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেটি ছিল সদর হাসপাতাল। সেখানে তাঁকে ৪৫ দিন চিকিৎসা নিতে হয়।
ঘটনাটি কোন মাসে ঘটেছিল জানতে চাইলে ফাতেমা জানান, অগ্রহায়ণ মাস হবে। কারণ নবান্ন করবেন বলে ওই সময় শ্বশুর তাঁকে বাবার বাড়িতে যেতে দেননি।
দেশ স্বাধীনের পর ফাতেমা অভাব-অনটনের মধ্যে সংসার শুরু করেন। এর মধ্যে স্বামীর মৃত্যু হয়। চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। শেষে বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে সন্তানদের লালন করেন। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন এক ছেলেকে নিয়ে সংসার তাঁর।
ফাতেমা দীর্ঘ দিনের চেষ্টার পর গত বছরের ডিসেম্বরে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি পান। সেই সঙ্গে ভাতাও পাচ্ছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে তাঁর কপালে ভাতা জুটত না। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতিও মিলত না। এখন সংসারে সুখ আসলেও তা স্বামী দেখে যেতে না পারাকেই জীবনের বড় কষ্ট হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।