আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
বে-টার্মিনাল প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ প্রকল্পে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৮০২ একর সরকারি খাস জমি প্রতীকী দামে নিতে চায়। তবে এতে রাজি নয় জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, প্রতীকী নয়, জমি অধিগ্রহণ করতে হলে পুরো দামই দিতে হবে।
২০২১ সালের জুন মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বে টার্মিনাল প্রকল্পের শূন্য দশমিক ৮৭৭৫ একর জমি স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হুকুম দখল আইন ২০১৭ এর ৬ (১) ধারা অনুযায়ী অধিগ্রহণ করতে বলা হয়। একই চিঠিতে ৮০২ দশমিক ৩৮৩৫ একর খাস জমি স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ম্যানুয়েল, ১৯৯৭ এর ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধিগ্রহণের কথা বলা হয়। সেই সঙ্গে খাস জমিটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব সরকারি অনুমোদনের তথ্যও জানানো হয়। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রশাসন। উল্টো দুই প্রকারের জমিকেই স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হুকুম দখল আইন ২০১৭-এর ৮ (৪) ধারা অনুসারে অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়। প্রায় সাত মাস পর গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানায়, জমির জন্য পুরো দাম দিতে হবে। বে টার্মিনালের জন্য অধিগ্রহণ করা ৮০৩ একর জমির দাম বাবদ ১২০ দিনের মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকাও দাবি করা হয় চিঠিতে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ৩১ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানায়, এত টাকা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এতে নতুন করে বে টার্মিনালের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের অনুকূলে জমা দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চমহলকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নামমাত্র দামে জমি হস্তান্তরের নির্দেশনা আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘জেলা প্রশাসন চিঠিতে বে টার্মিনাল প্রকল্পে অধিগ্রহণের জন্য ৩ হাজার ৬০০ কোটি চেয়েছে। যেহেতু এটি সরকারি খাস জমি, তাই বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতীকী মূল্যে দেওয়ার জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছি। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’ খাস জমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করলে টাকা লাগার কথা নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৫ সালে সমুদ্র উপকূলে এ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সরকারি প্রকল্পের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।