নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘তাঁর অনেক কিছু প্রাপ্য। আমরা সৌভাগ্যবান যে ওনার মতো এখন আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আছেন। সম্মানটা তাঁর প্রাপ্য। আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করব তাঁকে যথার্থ সম্মানটা দেওয়ার।’—ফাইনালের আগে প্রাপ্য সম্মানটা গোলাম রব্বানী ছোটনকে দিয়েছিলেন তাঁর ‘প্রিয়’ সাবিনা খাতুন।
তবে সেই সম্মানটা সার্থকতা পেত না যদি দশরথে ফাইনালে নেপালের কাছে হেরে যেতেন সাবিনারা। ৩-১ গোলে ঐতিহাসিক এক জয় পেয়েছেন সাবিনারা। দেশকে এনে দিয়েছেন সাফের শিরোপা। সেই শিরোপা এক অর্থে ছোটনের জন্য তাঁর শিষ্যদের গুরু দক্ষিণাও বটে।
ফুটবলের পথে হাঁটতে শেখার আগে ছোটনকে কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন সাবিনারা। ২০০৯ সালে যখন বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব পান ছোটন, তখন হয়তো মারিয়া-সানজিদারা বলে মাত্র লাথি মারা শিখেছেন। যখন দায়িত্ব পেলেন, লড়াই করার মতো খুব বেশি কাউকে পাননি ছোটন। সাবিনা, অংম্রাচিং, সুইনু প্রু মারমাদের জন্মগত প্রতিভা থাকলেও ছিল না প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে খেলার অভিজ্ঞতা। ভঙ্গুর একটা দল নিয়ে লড়াই করে গেছেন ছোটন, হাল ছাড়েননি। সেই হাল না ছাড়া মানসিকতায় মেয়েদের নিয়ে জিতেছেন প্রথম সাফের শিরোপা।
বাংলাদেশের বর্তমান দলকে একহাতে গড়ে তুলেছেন ছোটন। সেই অনূর্ধ্ব-১৫ দল থেকে ছোটনের কোচিংয়ের ছায়ায় আছেন মারিয়া-মণিকারা। সাবিনাদের আন্তর্জাতিক ফুটবলের স্পর্শও ছোটনের হারত ধরে। নারী সাফসহ জিতেছেন ছয়টি আন্তর্জাতিক শিরোপা কিন্তু সব সময়ই নিজেকে রেখেছেন পর্দার আড়ালে। ফাইনালে আসার কৃতিত্ব শিষ্যদের দিয়েছেন। দীর্ঘদিনের শিষ্য সাবিনা খুব কাছ থেকে দেখেছেন ছোটনকে। স্বপ্নের শিরোপাটা তাই কোচের জন্যই জিততে চেয়েছিলেন তাঁরা। সাবিনাদের স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে, এবার কি শিষ্যদের হাসিতে নিজের সুখ খুঁজে পাচ্ছেন ছোটন?
গতকাল ফাইনাল জেতার পর ছোটনের নিজের একটা দুঃখ লাঘব হয়েছে, ‘‘আজ এটা বলতে হয়, যখন আমি নারী দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন আমার বন্ধু-বান্ধবরাও আমাকে বলত যে ‘মহিলা কোচ’! যখন রাস্তায় হেঁটে যেতাম, আমাকে বলা হতো, ‘মহিলা কোচ’। এভাবে উপহাস করত। আমার কাছে তেমন কিছু মনে হতো না। আমি কাজকেই পছন্দ করতাম।’’
আগের মতো এই সাফল্যেও সব কৃতিত্ব সাবিনাদেরই দিচ্ছেন গুরু ছোটন, ‘মেয়েদের আবারও স্যালুট জানাব। তারা আসলে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছে! দেশের প্রতি, বাবা-মায়ের প্রতি তাদের যে কৃতজ্ঞতাবোধ, সেটা তারা দেখিয়েছে। আজ মেয়েরা এ পর্যন্ত এসেছে, তারা তৈরি হয়েছে। ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ২০১৬ সালে স্বপ্ন দেখেছিলেন (মেয়েদের নিয়ে), দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ যদি দিতে পারি, এক সঙ্গে মেয়েদের যদি রাখতে পারি, তাহলে সাফল্য আসবে। সেটা আজ এসেছে।’