সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
পায়ে আলতা, খোঁপায় ফুল, লাল-হলুদের শাড়ি আর ঢোল-মাদলের তালে ঝুমুর নাচ। এমন নানা আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় উদ্যাপন হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওরাঁও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব। উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রামে গত সোমবার রাতে শুরু হয় মূল উৎসব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবার ও নিজেদের সুখ-শান্তি কামনায় কারাম নামের একটি বিশেষ বৃক্ষের বন্দনায় এই গাছকে ঘিরে চলে আরাধনা গান। এতে অংশ নেন ওরাঁও সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। সবাই গানের সুরে সুর মিলিয়ে গাছ দেবতার প্রার্থনায় মেতে ওঠেন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতা যাকোব খালকো বলেন, বংশপরম্পরায় প্রতিবছর ভাদ্রের শেষে এবং আশ্বিনের শুরুতে তাঁরা এই উৎসব পালন করেন। কারাম একটি গাছের নাম। ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এটি পবিত্র গাছ, মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতিবছর এই উৎসব ঘিরে মুখর হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা।
যাকোব খালকো আরও বলেন, উৎসবের দিন খোলা মাঠে কারাম গাছের ডাল পুঁতে তাতে নানা ধরনের ফুল বেঁধে দেওয়া হয়। প্রদীপ জ্বালিয়ে নানা আয়োজনে চলে এ উৎসব। এতে অংশ নেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ।
স্থানীয় রিপ্পুন মুর্মু বলেন, গাছের দেবতা যেন সামনের বছর ভালো ফসল দেন, সে প্রার্থনা করা হয় এই উৎসবে। এই গাছকে ঘিরে চলে আরাধনা গান। গ্রামের নারীরা এ সময় শস্যের বীজ বপন করে অপেক্ষা করেন অঙ্কুরিত হওয়ার। আর কারাম উৎসবের দিনই বীজ রূপ পায় চারায়। উৎসব হয় শস্যদানার চারা আর কারাম গাছকে ঘিরে।
উৎসবে অংশ নেওয়া সূর্য মুন্ডারী বলেন, কারাম পূজায় যাঁরা অংশ নেন তাঁরা একাদশীর দিন উপোস থেকে পূজা-অর্চনা করেন। পরিবারের সবার মঙ্গল কামনায় সব মানুষ একত্র হয়ে প্রার্থনা করেন। কারাম গাছকে ঘিরে হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের ঝুমুর নাচ। বছরের এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন সব বয়সী মানুষ।
উৎসবের আয়োজকেরা জানান, কারাম উৎসব বংশপরম্পরায় চলে আসছে। কিন্তু উৎসবের মূল উপাদান কারাম গাছটি এখন বিলুপ্তির
পথে। গাছটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।