শেখ আবু হাসান, খুলনা
খুলনা শহর রক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান ইতিমধ্যে ধসে গেছে। এর বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধে অবৈধভাবে পাকা, আধা পাকা, কাঁচা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইট-বালু রেখে ব্যবসা করে যাচ্ছেন অনেকে। এসব কারণে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় সেকেন্ডারি টাউন ইন্টিগ্রেট প্রোটেকশন প্রজেক্টের আওতায় খুলনা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ৩৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ১৯৯৮ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর জেলখানাঘাট থেকে রুজভেল্ট জেটি পর্যন্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজকে ১০টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে রুজভেল্ট জেটি এলাকায় দুটি, জেলখানা ঘাট থেকে জেনারেল হাসপাতালের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত দুটি এবং বড়বাজার এলাকার জুতাপট্টি হয়ে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট পর্যন্ত ছয়টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে।
পাউবোর একাধিক সূত্রে জানা যায়, বাঁধ নির্মাণকালে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শর্ত থাকে, নদীর তীর সংরক্ষণকাজ সম্পন্ন হলে ব্যবসায়ীরা বাঁধের ভেতরের অংশে ব্যবসা করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নকশা অনুযায়ী ঘর তৈরি করতে হবে। কিন্তু বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার পর জেলখানা খেয়াঘাট থেকে নগরীর ৫ নম্বর ঘাট পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যবসা শুরুর সময় শর্ত মানেননি। তাঁরা নিজেদের মতো করে ঘর তৈরি করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বড়বাজার এলাকা, সদর হাসপাতাল ঘাট, কালিবাড়ী ঘাট, ডেল্টাঘাটসহ সাত-আটটি স্থানে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং মূল বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। জেলখানা ঘাট থেকে কালিবাড়ী ঘাট পর্যন্ত বাঁধের ওপর ইট-বালু রেখে অনেকে ব্যবসা করছেন। এসব এলাকার বাঁধ দেবে গেছে। বিগত কয়েক মৌসুমে টানা বর্ষণেও বাঁধের ক্ষতি হয়েছে।
নগরীর কালিবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী রফিউল আলম বলেন, বিআইডব্লিউটিএর অসাধু কর্মকর্তার কারণে কিছু ব্যবসায়ী বাঁধের ওপর অবৈধভাবে দোকানপাট, আড়ত, হোটেল নির্মাণ এবং বাঁধে নৌকা-ট্রলার, লঞ্চ ভিড়িয়ে মালামাল ওঠানো-নামানোয় বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বড়বাজার এলাকায় বহু প্রতিষ্ঠান কোনোটি অনুমোদন না নিয়ে কোনোটি শুধু তীরভূমির অনুমোদন নিয়ে, কোনোটি আধা পাকা স্থাপনা অনুমোদন আবার কোনোটি কাঁচা ঘরের অনুমোদন নিয়ে দোতলা, তিনতলা ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। বিআইডব্লিউটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে নদীর তীরভূমি অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাঁধের ওপর ও ভেতরে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় বাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধের বেশ কয়েক স্থানে ব্লক ধসে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে।