লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
‘এমভি আবদুল্লাহ’র ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানকে চট্টগ্রামে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলেন দুই ভাই। বৃদ্ধা মায়ের পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি বাড়িতে ব্যস্ত ছিলেন ছেলের পছন্দের খাবার মোরগ পোলাও রান্নায়।
আইয়ুব লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে। মাকে জড়িয়ে ধরে যেন ফিরে যান ছোটবেলায়। আর সন্তানকে নতুন করে ফিরে পাওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলেন মা। পরে বোন, ভাগনে-ভাগনিরা আইয়ুবকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে।
ততক্ষণে মা হুমায়ারা বেগমের যেন তর সইছিল না। জিম্মি দশায় কি-না-কি খেয়েছে, পরেও ঠিকমতো খেতে পেরেছে কি না মায়ের মন ভরে না। দ্রুত ছেলেকে নিয়ে যান তাঁর পছন্দের মোরগ পোলাও খাওয়াতে। কত দিন পর আইয়ুব পেটপুরে খেলেন মায়ের হাতের রান্না।
গতকাল বুধবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামে আইয়ুব খানের বাড়িতে গিয়ে এই নাবিক ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেল। স্বজনেরা জানান, আইয়ুবকে ছাড়া ঈদুল ফিতরে আনন্দ ছিল না পরিবারে। এখন যেন ঈদের আনন্দ ফিরে এসেছে।
মা হুমায়ারা বেগম বলেন, ‘খানাপিনা ছেড়ে কান্নাকাটিতে ছিলাম, আল্লাহর কাছে শুধু একটাই চাওয়া ছিল, আমার বাবাকে (ছেলে) সুস্থভাবে আমার কোলে ফিরিয়ে দেন। এখন খুব খুশি লাগছে।’
সুস্থভাবে আসতে পেরে খুবই খুশি জানিয়ে নাবিক আইয়ুব দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আইয়ুব জানান, গত ১২ মার্চ হঠাৎ জাহাজে আক্রমণ করে দস্যুরা (প্রথমে ১৩ জন ও পরে আরও বাড়ে দস্যুর সংখ্যা)। এ সময় সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। জাহাজে থাকা সব নাবিকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁদের সবাইকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে মুক্তিপণ নিয়ে ১৪ এপ্রিল নাবিকদের ছেড়ে দেয় জলদস্যুরা।