এস এস শোহান, বাগেরহাট
তিনটি বিশ্বঐতিহ্যের দুটিই বাগেরহাটে। একটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, অন্যটি মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ।
দর্শনার্থীরা ইচ্ছা করলেই এক দিনে ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য দুই স্থাপনা ভ্রমণ করতে পারেন। এর সঙ্গে এই জেলায় রয়েছে অন্তত ৫০টি প্রাচীন স্থাপনা, যা দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
এত সব সম্ভাবনা থাকার পরও পর্যটকবান্ধব পরিবেশ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাবার ও আবাসিক হোটেল, ট্যুরিস্ট বাস না থাকায় বাগেরহাটের পর্যটক তেমন আসছেন না।
এক কথায় পর্যটন স্পটের সংখ্যা অনেক হলেও পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগও ভেস্তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসন বলছে, বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনাকে কেন্দ্র করে জেলাকে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ব পর্যটন দিবসে গতকাল মঙ্গলবার বাগেরহাটে বর্ণাঢ্য রোডশো ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে সকালে শহরের স্বাধীনতা উদ্যানের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা বের হয়ে বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। মসজিদসংলগ্ন ঘোড়াদীঘির পাড়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা পর্যটনশিল্প বিকাশের দাবি জানিয়েছেন। রোডশো, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ট্যুরিস্ট ক্লাবের সদস্য, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
ষাটগম্বুজ-সুন্দরবন ট্যুরিজম ট্যুর অপারেটরের পরিচালক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু বলেন, জেলায় ষাটগম্বুজ, সুন্দরবনসহ অনেক পর্যটন স্পট থাকলেও সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে পর্যটকদের সঙ্গে স্থানীয়দের আচার-ব্যবহারে ঘাটতি রয়েছে। ষাটগম্বুজ, মোংলাসহ বিভিন্ন স্থানের হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদেরকেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে বাগেরহাটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। ফলে এখন দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাগেরহাটে আসা অনেক সহজ। এ জন্য জেলার প্রবেশপথে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যানার বা বিলবোর্ডের মাধ্যমে যদি একনজরে বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থাপনার বর্ণনা, যাতায়াত ব্যবস্থা, খাবার ও থাকার হোটেলের নাম্বার লিখে রাখা যায় তবে দর্শনার্থীদের জেলায় ভ্রমণ আরও সহজতর হবে।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন আগে জমি অধিগ্রহণ হলেও বাগেরহাটের বিমানবন্দর নির্মাণ শেষ হয়নি। বিমানবন্দর চালু হলে এই জেলায় বিদেশি ও উচ্চবিত্ত দর্শনার্থীদের আগমন আরও বাড়বে বলে দাবি করেন এই জনপ্রতিনিধি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ জানান, পর্যটননগরী বাগেরহাটে আগত দর্শনার্থীদের জন্য লোকালয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা (হোম স্টে) করতে পারলে স্থানীয়রা বেশ লাভবান হবেন। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদসংলগ্ন ঘোড়াদীঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।