মো. শামীম রেজা, রাজবাড়ী
দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় রাজবাড়ীতে। জেলার পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়। দেশজুড়ে এই অঞ্চলের পেঁয়াজের সুনাম রয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে পেঁয়াজের আবাদ।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজবাড়ীর পেঁয়াজ যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে দুটি কারণে চাষিদের প্রতিবছরই লোকসানের মুখে পড়তে হয়। হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজ না থাকা ও বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার ভয়। যে কারণে কম দামেই চাষিদের পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের যেসব জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়, সে সব জেলায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করলে চাষিরা সেখানে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। এমন হলে তাঁরা আরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করতেন। সংরক্ষণাগার না থাকায় তাঁরা দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য যে তাপমাত্রা দরকার সেটা না পাওয়ায় পেঁয়াজ পচে যায়। সেই সঙ্গে অনেক সময় পেঁয়াজের গাছ গজিয়ে যায়। তখন তাঁদের লোকসানে পড়তে হয়। ফলে উৎপাদন মৌসুমে কম দামে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন তাঁরা।
সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা তাঁদের আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখে পরে বিক্রি করেন। এই অঞ্চলে সরকার কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করলে তাঁরা পেঁয়াজ রেখে ছয়-সাত মাস পর বেশি দামে বিক্রি করতে পারতেন। এখন তাঁদের পেঁয়াজ রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘরে রাখলে দুই মাস পর পচে যায়, নয়তো চারা গজিয়ে যায়। যে কারণে লোকসানের ভয়ে এখন কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কৃষক সামাদ খান বলেন, ‘পেঁয়াজ যে দুই মাস রাখব, আমাদের ঘরও নাই। দুই মাস ঘরে রাখতে পারলে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারতাম। এতে আমরা লাভবান হতাম। কিন্তু সেই ব্যবস্থা আমাদের নেই। সরকার যদি একটা কোল্ড স্টোরেজ করে দিত, তাহলে আমরা সেখানে রাখতে পারতাম।’
পাংশার বাগদুলী ইউনিয়নের কৃষক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কীভাবে পাব আমরা? যখন ঘরে তুলব, তখনই ভারতের পেঁয়াজ আসে। এতে দুই হাজার টাকার পেঁয়াজের দাম চলে আসে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া পেঁয়াজ ঘরে রাখার কোনো ব্যবস্থা নাই। তিন মাস ঘরে রাখলেই পচন ধরে। এতে পেঁয়াজে লাভ তো দূরের কথা, মূলধনও থাকে না আমাদের। বাধ্য হয়েই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম সহীদ নূর আকবর বলেন, পেঁয়াজ চাষে সমৃদ্ধ এই জেলার চাষিরা যেন লোকসানের মুখে না পড়েন, সে জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার-বীজ সহায়তার পাশাপাশি কৃষি বিষয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে পেঁয়াজের আবাদ।
সহীদ নূর আকবর আরও বলেন, সংরক্ষণাগার থাকলে কৃষকেরা আরও লাভবান হতেন। বীজ বিপণন অধিদপ্তর থেকে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করা হলে কৃষকেরা সেখানে তাঁদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে তখন তাঁরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন। এতে লাভের আশায় কৃষকেরা আরও বেশি পেঁয়াজ আবাদ করবেন।