নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের ল্যানসেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ষাটোর্ধ্ব নাসিমা বেগমকে চিকিৎসক দেখিয়ে বের হচ্ছিলেন ছেলে হাসনাত। এক হাতে মাকে ধরেছেন, আরেক হাতে ব্যবস্থাপত্র। বের হওয়ার মুখেই ওষুধ কোম্পানির তিন বিক্রয় প্রতিনিধি তাঁদের ঘিরে ধরে। ‘দেখি’ বলেই একজন ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে নিলেন, অন্যরা দেখে নিলেন ওষুধের তালিকা। এমন কাণ্ডে হাসনাত রেগে গেলে বিক্রয় প্রতিনিধিরা ‘দুঃখিত’ বলে সটকে পড়েন।
চট্টগ্রামের ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতালে বিক্রয় প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম্যে বিব্রত রোগী ও তাঁর স্বজনেরা। এ নিয়ে রোগীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি, হাতাহাতির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পপুলার, এপিক হেলথ, পার্কভিউ, ম্যাক্স, ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেশি দেখা গেছে। তবে কোনো কোনো চিকিৎসকের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেখা করার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয় না। সাধারণ রোগী ছাড়াও জরুরি রোগীকেও টানাহেঁচড়া করতে দেখা গেছে।
এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জে সিভিল সার্জন বিক্রয় প্রতিনিধিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। চট্টগ্রামেও দাবি উঠেছে, এসব বিক্রয় প্রতিনিধিকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার।
রোগীর ভুক্তভোগী স্বজন হাসনাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুমতির তোয়াক্কা না করে এসব বিক্রয় প্রতিনিধিরা হাত থেকে নিয়ে ছবি তোলেন। এতে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্যও তাদের হাতে চলে যাচ্ছে। এদের লাগাম টেনে ধরবে কে? প্রশাসনকে অনুরোধ করব, হবিগঞ্জের মতো চট্টগ্রামেও এসব বন্ধ হোক।’
জানতে চাইলে ওষুধের বিক্রয় প্রতিনিধি শান্তনু কুমার চৌধুরী দাবি করেন, অনুমতি ছাড়া তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন না। মূলত কোন চিকিৎসক কোন কোম্পানির ওষুধ লেখেন, তা জানতে ব্যবস্থাপত্র দেখে থাকেন তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, নিজের কোম্পানি ওষুধ লেখার জন্য অনেক সময় চিকিৎসককে বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকেন তাঁরা। বিনিময়ে তাঁদের কোম্পানির ওষুধ লেখেন কি না, তা জানতে ব্যবস্থাপত্র দেখা হয়।
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা নিষেধ। এত সাধারণ একটি কমনসেন্স। এমনকি গবেষণাকাজের জন্যও অনুমতি ছাড়া কারও কোনো কিছু ব্যবহার করা যায় না। সেখানে অনুমতি ছাড়া রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছিনিয়ে নেওয়া তো অনেক বড় অপরাধ। এসব বিষয় ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের বুঝতে হবে।’