রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কালীবাড়ি বেদেপল্লিতে বসবাস দেড় শতাধিক পরিবারের। এসব পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা হাজারের ওপর। সুপেয় পানির জন্য দুর্ভোগের যেন শেষ নেই এসব পরিবারের। একটিমাত্র নলকূপের ওপর ভরসা করতে হয় তাদের। বিরাট এ জনগোষ্ঠীর পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। পুরো পল্লিতে নেই আধুনিক শৌচাগারও। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলে নিত্যদিনের কাজকর্ম। রোগবালাই লেগেই থাকে এখানকার বাসিন্দাদের।
বেদেপল্লির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা তেমন একটা জোটে না তাদের ভাগ্যে। সরকারি সুবিধা বলতে ১৫ টাকা কেজির চাল বাদে তেমন কিছু পায় না তারা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কাওরাইদ বাজারের পূর্ব পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে শতাধিক বছর আগে গড়ে উঠেছে বেদেপল্লি। এই পল্লিতে বর্তমানে বাস করছে দেড় শতাধিক পরিবার। এ জনগোষ্ঠীর জন্য ২০১৫ সালে সরকারিভাবে স্থাপন করা হয় একটি নলকূপ। একটিমাত্র নলকূপ থেকে খাওয়ার পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় বেদেপল্লির বাসিন্দাদের।
টিনশেডের তৈরি বাড়িগুলো জরাজীর্ণ। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতর পড়ে পানি। পল্লিতে নেই কোনো আধুনিক শৌচাগার। রোগবালাই পিছু ছাড়ে না বেদেপল্লির শিশুদের।
বেদেপল্লির রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের পল্লিতে পানির খুবই সমস্যা রয়েছে। আমরা একটিমাত্র নলকূপ থেকে খাওয়ার পানি নিতে পারি। বাকি সব কাজ করতে হয় নদীর পানিতে। বর্তমানে নদীর পানির অবস্থা খুবই খারাপ।’
পরী বানু নামের বেদেপল্লির আরেক বাসিন্দা জানান, মা-চাচিদের কাছ থেকে পাওয়া পেশার সঙ্গে লেগে আছেন ৪৫ বছর ধরে। গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে সিরামিকের থালাবাসন পাইকারি দামে কিনে এনে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন। মূলধন বলতে তেমন কিছু নেই। একটি ব্যাংক থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে কোনোমতে চলছে দিন। আগের মতো নেই ব্যবসা। মহল্লায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা খুবই প্রয়োজন।
বেদেপল্লির কালাম উদ্দিন। বিভিন্ন নদ-নদী থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে নদীর পানি শিল্পকারখানার বর্জ্যে দূষিত হয়ে মাছ কমে গেছে। সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
বেদেপল্লির বাসিন্দা মোহাম্মদ মোতালেব হোসেন বলেন, ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা বলতে জানি ১৫ টাকা কেজি দরে চাল। এ ছাড়া এই পল্লির জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। এতগুলো পরিবারের জন্য একটি পানির নলকূপ। নলকূপ থেকে শুধু খাওয়ার পানি নেওয়া যায়। নদীর ময়লা পানিতে সারতে হয় গোসলের কাজ।’
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজিজুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেদেপল্লির জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পানির পাম্পের ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে বেদেপল্লির জন্য শিগগিরই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।’