সিলেট প্রতিনিধি
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ১০ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু তাঁর পরিবারের অপেক্ষার প্রহর এখনো ফুরায়নি। আজও ছেলের ফেরার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবি। তাঁর সহধর্মিণী তাহসীনা রুশদীর লুনা এবং সন্তানেরাও করছেন অশ্রুসিক্ত অপেক্ষা। ১০ বছরেও উদ্ঘাটিত হয়নি ‘নিখোঁজ’ রহস্য ।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর মহাখালী থেকে গাড়িচালক আনছার আলীসহ নিখোঁজ হন সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। ওই দিন মধ্যরাতে মহাখালী থেকে ইলিয়াস আলীর ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার হলেও সন্ধান মেলেনি দুজনের।
এদিকে ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও ইলিয়াস আলীর বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি কোনো স্পষ্ট বক্তব্যও। তবে এখনো তাঁর ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী স্বজন ও দলের নেতা-কর্মীরা। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর তাঁকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে দেশব্যাপী গড়ে উঠে আন্দোলন। আন্দোলন করতে গিয়ে ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথে প্রাণ হারান তিনজন। টানা কর্মসূচি পালন করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপিও।
সিলেটেও ওই সময় টানা কর্মসূচি পালন করে স্থানীয় বিএনপি। স্বামীকে উদ্ধারের আবেদন জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ইলিয়াসের সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনাও। নিখোঁজের দুদিন পর তাঁর স্ত্রী তাহমিনা রুশদীর লুনা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। তিনি সে সময় অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবৈধভাবে তাঁর স্বামীকে আটক করেছিল।
তখন দলের নেতারাও একই অভিযোগ করেন। তাই ইলিয়াস আলীকে আদালতে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশ চেয়েছিলেন লুনা। তার রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ১০ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করে বলেছিলেন, ইলিয়াস আলীকে অবৈধভাবে আটক করা হয়নি এ মর্মে সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য কেন তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না। তবে সেই রিট আবেদনের শুনানির বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আজও পরিলক্ষিত হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বৃহত্তর সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা গুমের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়া দুঃখজনক। দেশের যে কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সরকারের। দেশের যে কোনো নাগরিক গুম হলে তাঁকে খুঁজে বের করারদায়িত্ব সরকারের। কিন্তু জননেতা এম ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আমরা মনে করি গুম হওয়া সবাই সরকারের হেফাজতে রয়েছেন।