রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
রাঙামাটির রাজস্থলীর বিভিন্ন পাহাড়ে ঝাড়ু তৈরির ফুলের কদর বাড়ছে। প্রতি সপ্তাহে কয়েক ট্রাক এই ফুল সংগ্রহ হচ্ছে। প্রথম দিকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ফুল সংগ্রহ করা হলেও বর্তমানে অনেকে এর চাষ করছেন। বছরের চার মাসে প্রায় ১৬ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন কৃষকেরা।
জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে ‘ঝাড়ু ফুলগাছ’ হিসেবে পরিচিত এই গাছ পরিত্যক্ত ভূমি, খাড়া পাহাড়, শক্ত পাথরের ওপর জন্মে। প্রথম দিকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফুল সংগ্রহ করলেও বর্তমানে কিছু লোক স্বেচ্ছায় এর চাষাবাদ শুরু করছেন। স্থানীয়ভাবে ‘ঝাড়ুফুল’ হিসেবে পরিচিত এই ফুল সংগ্রহ করে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের ‘ফুলঝাড়ু’ তৈরি করা হয়।
পাইন্দংপাড়ার কৃষক সুইক্যচিং মারমা জানান, একরপ্রতি ‘ঝাড়ুফুল’ বাগান থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়। অন্য কোনো খেত থেকে তা সম্ভব হয় না। একবার এর চাষ করা হলে প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে ফুল বিক্রি করা যায়। কম পরিশ্রম, অধিক মুনাফা ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে এর বাজারজাত করতে কোনো সমস্যা হয় না। এজন্য কোনো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও নেই।
রাজস্থলী ‘ঝাড়ুফুল’ বাজারে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ঝাড়ুফুল দুই টাকা থেকে সাড়ে তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি আঁটিতে ২০ থেকে ২৫টি ফুল থাকে। প্রতি জোড়া আঁটির দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা।
‘ঝাড়ুফুল’ ব্যবসায়ী মো. নুরুল ইসলাম জানান, একটি ট্রাক ভর্তি করতে হলে প্রায় ছয় লাখ টাকার ফুল কিনতে হয়। প্রতি সপ্তাহে রাজস্থলী বাজার, ইসলামপুর ও বাঙ্গালহালিয়া বাজার মিলে ১৮ থেকে ২০ ট্রাক ফুল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে। এতে সপ্তাহে তিনটি বাজারে কোটি ওপরে বেচাকেনা হচ্ছে।
ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে কমবেশি পরিমাণে ‘ঝাড়ুফুল’ বিক্রি হয়ে থাকে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় চার কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এতে চার মাসে ১৬ কোটি টাকা আয় করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নিউচিং মারমা বলেন, ‘কৃষি বিভাগ এ পাহাড়ি ঝাড়ুফুল বাগানের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকল্প প্রণয়ন করলে তা অবশ্যই বিবেচনা করে দেখা হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম রনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিবেচনা করে বাজেট করলে আমরা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত।’