বিপ্লব চন্দ্র রায়, শাল্লা (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের শাল্লায় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া প্রকল্পের’ নামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রকল্প দেখিয়ে এক ঠিকাদারের ব্যাংক হিসাবে বিল পরিশোধ করে সেই টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে শাল্লা এলজিইডির বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বিভিন্ন প্রকল্পে শতভাগ কাজ দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তালিকায় ২৬ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে, শাল্লা উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসে আর্সেনিক পরীক্ষার সামগ্রী সরবরাহ বাবদ ব্যয় হয়েছে দুই লাখ টাকা।
তবে জনস্বাস্থ্য অফিসের কর্মকর্তা বলছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে তাঁরা আর্সেনিক পরীক্ষার সামগ্রী বাবদ দুই লাখ টাকার কোনো বরাদ্দ পাননি। জানতে চাইলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের তো কোনো স্বাক্ষর লাগেনি, তাই যে যেভাবে পারে, প্রকল্প তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নেয়।’
অন্যদিকে প্রকল্প তালিকায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের দরিদ্র পরিবারের মাঝে রিং স্লাব বিতরণ বাবদ ৮ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তারপরও তালিকার ১৮ নম্বরে উপজেলার বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারের মধ্যে রিং স্লাব বিতরণ বাবদ দুই লাখ টাকার আরেকটি প্রকল্প দেখানো হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই চার ইউনিয়নের বাইরে আলাদাভাবে কাউকে রিং স্লাব বিতরণ করা হয়নি।
এ ছাড়া উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারের পশ্চিম সাইটে রাস্তা সিসিকরণ কাজ এবং বাজারে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্পে কাজের শতভাগ শেষ দেখানো হয়েছে। সেই বিল বাবদ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮২৩ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে ২০২২ সালের ২৮ জুন ব্যাংক হিসাবে পরিশোধ করা হয়েছে। পরে ৫ জুলাই এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চেকে ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা তুলে আরেকটি ব্যাংক হিসাবে নেওয়া হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই প্রকল্পে বাজারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও রাস্তা সিসিকরণের কাজ করা হয়নি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রতন চন্দ্র তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাস্তা সিসিকরণের কাজের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এই প্রকল্পে কোনো কাজ তিনি করেননি।
ঠিকাদার আরও জানান, ২০২২ সালের ২৮ জুন শাল্লা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান ফোন করে তাঁকে ডেকে নেন। পরে এই প্রকৌশলী তাঁর ব্যাংক হিসাবে কিছু বিলের টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানান। রতন তালুকদার কিসের টাকা জানতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, অফিসের কাজ করা হবে। ঠিকাদার রাজি না হলে তাঁকে ভয়ভীতি দেখান নুরুজ্জামান। পরে প্রকৌশলীর ভয়ে একই বছরের ৫ জুলাই ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার একটি চেক দেন তিনি। পরে ওই চেকের মাধ্যমে শাল্লা সোনালী ব্যাংক শাখায় অন্য হিসাবে টাকা সরিয়ে নেন প্রকৌশলীর ‘এক বিশ্বস্ত লোক’।
ওই দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি ২০২২ সালের মার্চ মাসে বদলি হয়েছি। আমি থাকাকালীন কোনো ভুয়া বিল দেওয়া হয়নি। পরে কী হয়েছে, সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না। এগুলোর বিষয়ে নুরুজ্জামান সাহেব জানেন।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শাল্লা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদার কাজ করেছে বলেই বিল পেয়েছে।’ তবে অন্য হিসাবে টাকা সরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, ‘ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিল দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।’