সেলিম সুলতান সাগর, চিতলমারী (বাগেরহাট)
‘তালপাতায় লিখলে লাইনটা সোজা হয়। হাতের লেখা সুন্দর হয়। সে জন্য ওদের তালপাতায় বর্ণমালা শিক্ষা দেই। তালগাছের পাতা আর কয়লা গুঁড়ো করা কালি ওদের শিক্ষার মূল উপকরণ। ক্লাসে আদর্শলিপি ও ধারাপাত পড়ানো হয়। আধুনিক যুগেও গ্রামের কোমলমতি শিশুরা মাটিতে পাটি বিছিয়ে মনের আনন্দে এ শিক্ষা গ্রহণ করছে, আর অভিভাবকেরা প্রাচীন এ শিক্ষাব্যবস্থায় বেশ খুশি।
গতকাল সোমবার দুপুরে এভাবেই কথাগুলো বললেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া শিশু শিক্ষানিকেতনের (পাঠশালা) শিক্ষক কালিপদ বাছাড় (৮০)।
কালিপদ বাছাড় বলেন, ‘অর্থ (টাকা) নয়, মনের টানে ওদের শেখানোর চেষ্টা করি। পাঠশালায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আছে। যখন ক্লাস ওয়ানের উপযুক্ত হয় তখন প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ জন কাছের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।’
তিনি আরও জানান, তাঁদের গ্রামের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বিষয়টি গ্রামের সমাজসেবক অমূল্য মণ্ডলকে বললে তিনি (অমূল্য মণ্ডল) পাঠশালার জন্য ৬ শতক জায়গা দান করেন। সেই থেকে ২০০৫ সালে গড়ে ওঠে ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া শিশু শিক্ষানিকেতন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে শিক্ষক কালিপদ বাছাড় বিনা বেতনে গ্রামের শিশুদের শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন।
পাঠশালার শিশু শিক্ষার্থী বিকর্ণ মণ্ডল, অপরূপ গাইন, দিয়া মণ্ডল ও উৎসব রায় জানায়, পণ্ডিত মহাশয় তাদের খুব সুন্দরভাবে লেখাপড়া শেখান। তারা স্যারের আচরণে মুগ্ধ।
অভিভাবক বনানী মণ্ডল, শিপ্রা মণ্ডল, রুনা মণ্ডল ও ঊর্মি মণ্ডল বলেন, ‘আধুনিকতার এ যুগে তালপাতা ব্যবহার করে লেখাপড়া আজকাল আর দেখা যায় না। আমাদের পণ্ডিত মহাশয় পরম আদর-যত্নে ওদের লেখাপড়া শেখান। আমরা সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে পাঠশালায় অবস্থান করি।’
পাঠশালার সভাপতি বিপুল মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক সনজিৎ রায় বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসীরা সবাই মিলে পাঠশালার একটি অবকাঠামো দাঁড় করিয়েছি।