ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
পতিত জমিতে কচু চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাষিরা। নিচু ও ছায়াযুক্ত জমিতে বোরো ধান না হওয়ায় আট একর জমিতে কৃষি বিভাগের সহায়তায় প্রচুর কচু ফলিয়েছেন তাঁরা।
উপজেলার বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদের কৃষি, মৎস ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রচেষ্টা ও উদ্বুদ্ধকরণের ফলে ৯টি ওয়ার্ডের ৩১ জন চাষি এ বছর কচু চাষ করেন। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের ৪টি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে।
কৃষকেরা জানান, ওই সব জমিতে বোরো মৌসুমে ধান চাষাবাদ করা যায় না। জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় জলজ ঝোপঝাড় ও আগাছার জন্য জমিতে ধান রোপণ সম্ভব হয় না। যদিও কেউ কেউ ঝোপ ও আগাছা পরিষ্কার করে ধান চাষ করছেন। কিন্তু তাতে যে ফলন আসছে, তা বিক্রি করে খরচ উঠছে না। তাই বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদের কৃষি, মৎস ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় চাষিদের কচু চাষের পরামর্শ দেন বলে জানান বেতাগা ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউনুস আলী শেখ।
এ ধরনের পতিত জমিতে কচু ফলিয়ে সাফল্য পাওয়া চাষিদের মধ্যে বেতাগা গ্রামের চাষি এস্কেন্দার শেখ ও সাধন দাশ, ধনপোতা গ্রামের মিলন পাল, মাসকাটা গ্রামের চাষি রবিউল অন্যতম।
এ ছাড়া ধনপোতা গ্রামের চাষি মিলন পাল জানান, ১০ কাঠা জমিতে কচু চাষ করতে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। চাষ থেকে শুরু করে সমস্ত কচু বিক্রি পর্যন্ত ৪ মাস সময় লাগে। ধান চাষের চেয়ে অধিক লাভবান হওয়ায় এবং তাঁদের সাফল্য দেখে অন্যান্য চাষিরাও কচু চাষের দিকে ঝুঁকছে।
বেতাগা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘কন্দল ফসল কচু উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এই ইউনিয়নে প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য চাষিদের যে কোনো পরামর্শ প্রদানের জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শন করি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত বলেন, কচু ও কচুশাকে প্রচুর ভিটামিন এ, আয়রন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। এর শাক ও পাতায় চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। কচু অত্যন্ত লাভজনক ফসল। আলু বা ধান চাষের থেকে এই চাষে পরিশ্রম বা খরচ কিছুটা কম। দাম কম কিন্তু পুষ্টির আঁধার বলা হয় কচুকে।
বেতাগা মডেল ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, ‘চাষিদের এক ইঞ্চি জায়গাও অনাবাদি থাকবে না, এই লক্ষ্য নিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটি কাজ করছে। প্রান্তিক কৃষকেরাও পরিষদের এ বার্তাকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করে পতিত জমিতে কচু চাষ করেছেন। এতে তাঁরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি এলাকার মানুষের পুষ্টিমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করছেন।