নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গত মৌসুমে দুই হাতে অর্থ ঢেলেও ঘরোয়া ফুটবলে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ট্রফি কেস ছিল ফাঁকা। গুঞ্জন ছিল গতবার দল সাজাতে ১০ কোটি টাকা খরচ করেছিল রাসেল। টাকায় আসেনি সাফল্য। বরং পাওনা পারিশ্রমিক আদায়ের দাবিতে গতকাল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দ্বারস্থ হয়েছেন রাসেলের হয়ে গত কয়েক মৌসুমে খেলা ১৫ ফুটবলার!
গতকাল বাফুফে ভবনে গিয়ে বকেয়া পারিশ্রমিকের দাবিতে শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান জাতীয় দলের একাধিক ফুটবলারসহ ১৫ ফুটবলার। জাতীয় দলে খেলছেন বা খেলেছেন এমন ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন রহমত মিয়া, সাদ উদ্দিন, মো. জুয়েল, নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর মতো ফুটবলার। গত মৌসুমের ফুটবলারদের সঙ্গে রাসেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন আগের মৌসুমের বেশ কয়েকজন। বকেয়া পারিশ্রমিক আদায়ে আগেও সোচ্চার হয়েছেন ফুটবলাররা। গত নভেম্বরে সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে বকেয়া ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার দাবিতে বাফুফের কাছে অভিযোগ জানান জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া।
এবারের মৌসুমে আবাহনীতে খেলছেন ডিফেন্ডার রহমত মিয়া। গত মৌসুমে ৬০ লাখ টাকায় খেলেছেন রাসেলের হয়ে। চুক্তির ৯ লাখ টাকা এখনো বাকি আছে দাবি করে বাফুফে নির্বাহী হাসান মাহমুদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তিনি। রাসেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের পরও তাঁর পাওনা পরিশোধ করা হয়নি জানিয়ে আজকের পত্রিকাকে রহমত বলেন, ‘ফুটবলাররা কিছু করলে ক্লাব সোচ্চার হয়ে ওঠে। সেই ক্লাব এখন পাওনা টাকা দিচ্ছে না কেন? এটা ফুটবলারদের হক।’
২০২০-২১ মৌসুমে রাসেলের আক্রমণভাগে ছিলেন উইঙ্গার মো. ইলিয়াস। দুই মৌসুম আগের বকেয়া ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকার দাবি জানিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনিও। বর্তমানে বিসিএলের দল নোফেল স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলা ইলিয়াস জানান, ‘বারবার রাসেলের কর্মকর্তাদের কাছে ফোন দেওয়ার পরও আমাকে ঘোরানো হয়েছে। আমার মা দুইবার স্ট্রোক করেছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য আমার পাওনা টাকা চেয়েছি, কেঁদেছি। কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, হচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু কোনো ফল আসেনি। আমাকে অনেক হয়রানি করা হয়েছে।’
রাসেলের কাছে বিভিন্ন অঙ্কের পারিশ্রমিক বকেয়া ফুটবলারদের। ২০১৯-২০ মৌসুমে রাসেলের রক্ষণে খেলা ইয়ামিন মুন্নার পাওনা ১৮ লাখ টাকা। বিদেশি ফুটবলারদের বেতন না দিয়ে জরিমানা গোনার অতীত দুর্নাম আছে ক্লাবটির। ২০২০ সালে পূর্ব তিমুরের ফুটবলার পেদ্রো হেনরিক অলিভেরাকে দুই মাসের বেতন না দেওয়ায় ৯৬ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে ক্লাবটিকে। গত মৌসুমে এক বিদেশি ফুটবলারের পেছনেও ৬০ লাখ টাকার বেশি জরিমানা দিয়েছে রাসেল।
শেখ রাসেলের সভাপতি পদে আছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর। ফুটবলারদের অভিযোগ, মাসিক পারিশ্রমিক সায়েম সোবহানের পক্ষ থেকে সময়-সময় পরিশোধ করা হলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছেই আটকে যায় সেই টাকা। ফুটবলারদের টাকা নিয়ে দুর্নীতি হলেও হতে পারে বলে মনে করেন রহমত মিয়া। বললেন, ‘শুনেছি ৬ বছরে শেখ রাসেলের পেছনে ১০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে আমাদের মাত্র ২ কোটি টাকা ক্লাব কেন পরিশোধ করছে না? আমরা অনেকবার ক্লাবের কাছে ধরনা দিয়েছি। সম্ভবত আমাদের এই অভিযোগগুলো সভাপতির কান পর্যন্ত পৌঁছতে দেওয়া হয় না।’
ফুটবলারদের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় শেখ রাসেলের ম্যানেজার হাবিবুর রহমান মান্নুর সঙ্গে। এ বিষয়ে কিছু জানা নেই দাবি করে আগের কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
শেখ রাসেলের ক্রীড়া পরিচালক সালেহ জামান সেলিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি। ফোনে এসএমএস পাঠানো হলে এরও জবাব দেননি সেলিম।