হোম > পথের কথা

বাবার ব্যবসা খেয়েছে মহামারি, একা যুদ্ধে নেমেছেন রিয়াদ

ফজলে আলম নিপুণ

ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটে ব্যাগের ব্যবসা করতেন বাবা। ঋণের জালে পড়ে কদিন আগেই ব্যবসা গুটিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় তিন ভাইবোনসহ মোট  পাঁচ জনের দায়িত্ব এসে পড়ে রিয়াদের ঘাড়ে।

মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইসলাম রিয়াদ, সবে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষে উঠেছেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদপুর শাখায়। পড়ালেখা আর পরিবার সবমিলিয়ে চোখে অন্ধকার করছেন তিনি।

এর মধ্যে ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। ১১ জুলাই ২০২০, ধানমন্ডি লেক। রিয়াদের পকেটে ৪২০ টাকা। কথায় কথায় পরিচয় হয় শামসুল হকের সঙ্গে। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস মেপে যার রোজগার। পরিবারের অবস্থা শুনে শামসুল হকই রিয়াদকে পরামর্শ দেন মাস্কের ব্যবসা শুরু করার। ১৭০ টাকা দিয়ে দুই বাক্স সার্জিক্যাল মাস্ক কিনে পরদিন ভোর থেকেই নেমে পড়েন নতুন জীবনযুদ্ধে। সকাল ১০টার মধ্যে মোট বিক্রি ৩৫০ টাকা, লাভ ১৮০ টাকা। সাহস বেড়ে যায় রিয়াদের।

তিনমাসে সবমিলিয়ে পকেটে জমে হাজার পাঁচেক টাকা। বাবার ব্যবসার সূত্রে কিছু পরিচিত লোকের সাহায্যে মাস্কের সঙ্গে টি–শার্টও বিক্রি শুরু করেন। একদিন সকালে লেকে হাঁটতে আসা দুই ব্যক্তি ১০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্কের অর্ডার দেন। ডেলিভারি সময় তিন দিন।

কিন্তু এতো বড় অর্ডার নেওয়ার সামর্থ্য নেই রিয়াদের। হাতছাড়া করতে চান না সুযোগও। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সহায়তায় সময়মতো পৌঁছ দেন ১০ হাজার মাস্ক। মনোবল এবার আকাশচুম্বি।

প্রতি সপ্তাহে পেতে থাকেন মাস্কের অর্ডার। পরিবারকে কিছু টাকা পাঠাতে শুরু করেন। ঘর ভাড়া নেন ধানমন্ডির শুক্রাবাদ এলাকায়।

তবে ব্যবসা করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে থাকেন পড়ালেখায়। দিনের বেশিরভাগ সময় চলে যায় ঘরের বাইরেই। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েও তো রিয়াদের স্বপ্ন বিশাল। এবার ঘুম থেকে ওঠা শুরু করলেন ভোর ৪টায়। ৬টা পর্যন্ত লেখাপড়া, সকাল ৭টা থেকে ১০টা থেকে অবধি লেকে বেচাবিক্রি। এরপর বিভিন্ন জায়গায় মাস্ক ও টি–শার্ট ডেলিভারি দেন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। রাত ১১টায় ঘুমানোর আগে পর্যন্ত পুরো সময়টা বরাদ্দ রাখেন লেখাপড়ায়।

রিয়াদ এখন পর্যন্ত এই রুটিনেই চলছেন। মাঝে সময় গড়িয়েছে প্রায় একবছর । এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী তিনি। নিয়মিত পরিবারের টাকা পাঠান। ছোট ভাইকে ঢাকায় এনে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। শেষ করেছেন স্নাতক।

পেশা হিসেবে শিক্ষকতা পছন্দ রিয়াদের। ইচ্ছে আছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। অনলাইনে চালিয়ে যেতে চান ব্যবসা। তাই দক্ষতা বাড়াতে প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন । মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে আদর্শ মানেন তিনি।

নিজের এই জীবনযুদ্ধ নিয়ে রিয়াদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে দুনিয়াকে দেখতে চাই। কোনো শেকলে বাঁধা পড়ার ইচ্ছে নেই। পথচলা সবে শুরু করেছি। নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, যত ঝড়ই আসুক, গন্তব্যে পৌঁছার আগে থামবো না।’ রিয়াদের ছোট হালকা শরীরে ঝিলিক দিয়ে ওঠে আত্মবিশ্বাস!

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য: কেমন আছেন খেটে খাওয়া মানুষ

দার্জিলিংয়ের সেই গোমড়ামুখো চালক

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’

 ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে’

বরই বেচে ভাত জোটে না দেলোয়ারের

দুর্গম পাহাড়ি পথে ভরসা বাবুল বড়ুয়া

টিয়া পাখির বাচ্চার প্রাণ বাঁচানো লিয়নকে বাঁচাবে কে

দুই কিডনিই বিকল, মেয়েকে বাঁচাতে প্রবাসী কর্মী মা এখন অটোরিকশা চালক

সত্তরোর্ধ্ব হাসেমের কাঁধে দিনভর আইসক্রিমের বাক্স, তবুও বুড়ো-বুড়ির সংসারে টানাটানি 

অধরাদের স্বপ্নেরা কখনো বাড়ি ফেরে না

সেকশন