ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেল ‘লামা’ ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর জন্য এআই টুল তৈরি করেছে চীনের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সঙ্গে কাজ করে থাকে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার এআই মডেলের প্রাথমিক সংস্করণ ব্যবহার করে ‘চ্যাটবিট’ নামক টুল তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে পিএলএ–এর প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি সায়েন্স (এএমএস) –সহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের ছয়জন চীনা গবেষক টুলটি তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরেন।
টুলটি তৈরির জন্য মেটার লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) ‘লামা ২ ১৩ বি’ ব্যবহার করেছেন গবেষকেরা। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মডেল উন্মোচন করে মেটা। এই মডেলে নিজেদের কিছু প্যারামিটার যুক্ত করে সেনাবাহিনী কেন্দ্রিক এআই টুল তৈরি করেছেন চীন। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ করতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে টুলটি সাহায্য করবে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, চ্যাটবটটি সেনাবাহিনীর বিষয়ে চ্যাট এবং প্রশ্ন-উত্তর কার্যক্রমের জন্য উন্নত করা হয়েছে। এটি অন্যান্য এআই মডেলের চেয়ে বেশি কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে, যেগুলোর সক্ষমতা ওপেনএআই এর চ্যাটজিপিটি ৪.০ –এর ৯০ শতাংশ ছিল।
তবে গবেষকেরা টুলটির কর্মক্ষমতা কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি এবং এআই মডেলটি কোনো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা স্পষ্ট করেননি।
জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের সহকারী ফেলোর ও এআই বিশেষজ্ঞ সানি চেঙ বলেন, ‘গবেষণাপত্রের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেল যে, চীনের পিএলএ–এর বিশেষজ্ঞরা সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য মেটার মতো ওপেনসোর্স এলএলএম নিয়ে গবেষণা করছেন এবং এই মডেলের ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।’
কোম্পানির অনেক এআই মডেল সবার জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছে মেটা। তবে এসব মডেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কোনো সেবা ৭০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী থাকলে কোম্পানির কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মেটার শর্তাবলিতে বলা হয়েছে, ‘সামরিক, যুদ্ধ, পারমাণবিক শিল্পে, গুপ্তচরবৃত্তি এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের আওতাধীন অন্যান্য কার্যকলাপের জন্য এসব মডেলে ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ ছাড়া এগুলো অস্ত্র তৈরি এবং ‘হিংসা উসকে দেওয়া এবং প্রচার করার’ উদ্দেশ্যে কনটেন্ট তৈরি করার জন্যও ব্যবহার করা যাবে না।
তবে মেটার মডেলগুলো পাবলিক হওয়ার কারণে কোম্পানির পক্ষে এসব শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন।
চীনের মেটার মডেল ব্যবহারের প্রসঙ্গে কোম্পানিটি পাবলিক পলিসির পরিচালক মলি মন্টগোমারি বলেন, পিপলস লিবারেশন আর্মি আমাদের মডেলগুলোর অননুমোদিত ব্যবহার করছে যা কোম্পানির নীতির বিরুদ্ধে।
চীনা গবেষকদের মধ্যে রয়েছেন গেং গুয়োটং এবং লি ওয়েইওয়েই, যারা এএমএস-এর সামরিক বিজ্ঞান তথ্য গবেষণা কেন্দ্র ও জাতীয় উদ্ভাবন প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া এই গবেষণার সঙ্গে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও মিনজু ইউনিভার্সিটির গবেষকরাও যুক্ত রয়েছেন।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, ‘ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে চ্যাটবিট শুধুমাত্র গোয়েন্দা বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হবে না, বরং কৌশলগত পরিকল্পনা, সিমুলেশন প্রশিক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মেটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে মডেলগুলো সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত কিনা এমন উত্তপ্ত আলোচনার সময়ে গবেষণাপত্রটি সামনে এল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যা সঠিকভাবে এআই পরিচালনায় ভূমিকা রাখবে। যদিও নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য এসব মডেল থেকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাওয়া যায়। তবে মডেলের মধ্যে থেকে ‘সুরক্ষা ব্যবস্থা অপসারণের’ মতো বিভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকিও রয়েছে।
চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন জানায়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং চীনের অন্যান্য প্রযুক্তি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ম চূড়ান্ত করছে দেশটি।